
কলাভবন বাইরে থেকেই দেখার সুযোগ — রোহিত সেনের উদ্যেোগে বায়োস্কোপ এবার শান্তিনিকেতন
একটা সময় ছিল যখন বিনোদন মানে ছিল ছোট্ট একটা বাক্সের মধ্য দিয়ে ঘোরা চলচিত্র — যার নাম বায়োস্কোপ ।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বায়োস্কোপ এখন প্রায় বিলুপ্ত। আগে গ্রামবাংলার বিভিন্ন মেলা, বাজার ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন বায়োস্কোপওয়ালারা। তাঁদের বিভিন্ন ধরনের গানের মাধ্যমে আকৃষ্ট করতেন ছোট–বড় বিভিন্ন বয়সী মানুষকে। এমন এক সময় ছিল, যখন মানুষের একমাত্র বিনোদন ছিল যাত্রাপালা–সার্কাস। কিন্তু যাত্রাপালা–সার্কাস ছিল শুধু বয়স্ক মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ। কিন্তু বায়োস্কোপ ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। একসময় বায়োস্কোপওয়ালারা গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে যেতেন বায়োস্কোপের বাক্স কাঁধে নিয়ে। তাঁদের পিছু নিত শিশু–কিশোরেরা।
ঐতিহ্যকে আবার জীবন্ত করলেন কলাভবনের ছাত্র রোহিত সেন
বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা — তাই বাইরে থাকা পর্যটকরা আশ্রমটি ঘুরে দেখতে পাচ্ছেন না। সেই ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে কলাভবনের ছাত্র রোহিত সেন কলাভবন গেটের কাছে একটা বিশেষ বায়োস্কোপ স্থাপন করেছেন। সেখানে চোখ রাখলে ঘরে বসেই কলাভবন, গৌরপ্রাঙ্গণ, আম্রকুঞ্জ, ঘন্টাতলা, কালো বাড়িসহ সম্পূর্ণ আশ্রমটি ঘোরা যায়। এর সাথে রয়েছে রামকিংকর বেইজের বিখ্যাত ভাস্কর্য ও ওয়াল মিউরালগুলিও।

প্রচণ্ড উৎসাহ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থীরাও — তারা বলছেন যে বাইরে থেকেই আশ্রম ঘুরে দেখতে পেয়ে তাদের ভালো লেগেছে ও আবেগপ্রবণ হয়েছেন তারা।কলাভবন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত ও বিশেষ ঐতিহ্যমন্ডিত একটি অংশ। ১৯২৩ সালে এর পথচলা শুরু হয় নন্দলাল বসুর নেতৃত্বে। তারপর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুরেন্দ্রনাথ কর, অসিত কুমার হালদার, রামকিংকর বেইজ, কেজি সুব্রমণ্যম ও যোগেন চৌধুরীর মতো অনেক কলাকার কলাভবনকে সমৃদ্ধ করেছেন। কলাভবন ও বিশ্বভারতীর এই ঐতিহ্য ২০২৩ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদা পেয়েছে — যা বিশ্বের একমাত্র চলমান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশেষ মর্যাদা প্রকাশ করে।
বিশ্বরভারতীর ক্যাম্পাসে প্রবেশে রয়েছে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা — এর কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলেছে যে অনেক ঐতিহ্য ও স্থাপনা রয়েছে যা দর্শনার্থীদের স্পর্শ বা অসাবধানে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কলাভবনের ছাত্র রোহিত সেনের উদ্যেোগে বাইরে থেকেও সেই ঐতিহ্য উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন সবাই। বায়োস্কोपে রয়েছে একটা কিউআর কোডও — যা স্ক্যান করলে কলাভবন ও আশেপাশের ঐতিহ্য সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
কলকাতার পর্যটক পৃথা মণ্ডল বলেন, “খুবই ভালো লাগল। বাইরে থেকেই সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখলাম।”
আগেকার দিনে বায়োস্কোপ ছিল গ্রামবাংলার মানুষের সিনেমা হল। রংবেরঙের পোশাক পরে হাতে ঝুনঝুনি বাজিয়ে গ্রামের সরু রাস্তা ধরে হেঁটে চলতেন বায়োস্কোপওয়ালারা। স্কুল–কলেজেও দেখা মিলত বায়োস্কোপওয়ালাদের। হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো হতো বিভিন্ন চিত্রকল্প।কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে বায়োস্কোপ। টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মুঠোফোনের সহজলভ্যতার কারণে প্রায় বিলুপ্ত এই বায়োস্কোপ।
Comments are closed.