বিশ্বভারতী হেরিটেজ সাইটে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার

বিশ্বভারতী হেরিটেজ সাইটে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার

বিশ্বভারতীর হেরিটেজ সাইট এবার জনসাধারণের জন্যও খোলা
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, ১৯২১ সালে।সেই থেকে এখনো পর্যন্ত এই ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েও বিশ্ববিদ্যালয় এর এতটুকু জৌলুস ও কমেনি, বরং দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। তিনি চেয়ে ছিলেন আশ্রমিক ধাঁচে এই বিদ্যালয় গড়ে তুলতে এবং এখনো বিশ্বভারতীর পাঠভবনে আশ্রম এর মতই গাছের তলায় প্রকৃতির চারপাশে খোলা একশ এর নিচেই ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাস করে থাকে।
সম্প্রতি ২০২৩ সালের ১৭সেপ্টেম্বর ইউনেস্কো বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কে “ world first living heritage site” বলে স্বীকৃত করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কাছে এটি যথেষ্ট গর্বের বিষয়। বিশ্বভারতীই গোটা বিশ্বে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যা এই “ জীবন্ত ঐতিহ্য” এর আখ্যা পেয়েছে।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এর দ্বার বরাবর সাধারণ মানুষের জন্য খোলাই ছিল কিন্তু বিভিন্ন করণের জন্য এই দ্বার বিগত পাঁচ বছর জনসাধারণের জন্য বন্ধ ছিল। শুধু মাত্র সেখান কার পাঠরত ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা এবং কর্তরত দের জন্যই দ্বার খোলা ছিল।
কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় এর নতুন উপাচার্য ডা. প্রবীর কুমার ঘোষ এর নতুন উদ্যোগে আবারো এই দার পাঁচ বছর পর খুলে যাচ্ছে। আবারো সহস্কৃতিমনস্কো যারা আছেন এবং পর্যটক যারা আছেন,তারা আবার কবির স্মৃতিচারণ করতে পারবেন নতুন করে। তারা আবারো তার সৃষ্টির সাক্ষী হতে পারবে, তাই সবাবিক ভাবের সবার মধ্যে প্রচন্ড উৎসাহের সঞ্চার হয়েছে। উপাচার্য জানিয়েছেন যে জুলাই মাসের শেষ থেকেই ট্রায়াল হিসাবে শুধু মাত্র রবিবার দিনেই পর্যটকরা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন এবং যদ দেখা যায় এই ট্রায়াল সফল হয়েছে তাহলে নভেম্বর মাশ থেকে প্রত্যেক সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন করে পর্যটক দের জন্য খুলে যাবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হেরিটেজ সাইট।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হেরিটেজ সাইটে এর বিভিন্ন নিয়মাবলী
সবার জন্য খুলে গেলেও পর্যটক দের বিভিন্ন নিয়ম রীতি নীতি মানতে হবে তাদেরকে। পর্যটক দের জন্য প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টার একটি প্যাকেজ থাকবে। যার মধ্যে তারা পাঠভবন, সিংহাসদন, উপাসনা গৃহ, কালো বাড়ি সহ পুরো বিসাভারতির ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন। এবং সবশেষ সঙ্গীত ভবন এর একটি লাইভ পারফরম্যান্সও উপভোগ করতে পারবেন। প্রত্যেকদিন চারটি ব্যাচে পর্যটক দের জন্য প্রবেশাধিকারের অনুমতি দেওয়া হবে এবং টিকিট আপাতত তাদেরকে অফলাইন এই সংগ্রহ করতে হবে। যদি এই ট্রায়াল টি সফল যায় তাহলে সবার সুবিধার্থে অনলাইনে টিকিট বুকিং এর সুবিধাই চালু করা হবে। এই খবরে শান্তিনিকেতন তথা গোটা রাজ্যের পর্যটক এবং সংস্কৃতিমনষ্ক যারা আছেন তাদের সবার মধ্যেই খুশির আমেজ বয়ছে।
বিশ্বভারতীর মধ্যে পর্যটক দের প্রবেশ না থাকলেও সারাবছর এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষ জনের ভির লেগেই থাকত। কারণ বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে কোথায় নাড়ির তান থেকে গেছে শান্তিনিকেতনের , তাই বার বার এই নাড়ির টানেই সবাই ফিরে ফিরে আসে। এমনকি সুদূর বিদেশ থেকেই পর্যটক দের আনাগোনা কম নয় এই শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেতন তথা এই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হেরিটেজ সাইট পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক মরুদ্যান রূপে খ্যাত।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হেরিটেজ সাইট সবার জন্য আবারো খুলে যাওয়ার খবরে সবার মনেই চাঞ্চল্য স্মৃতি করেছে। তাই বিশেষ করে পর্যটক মহলে নতুন করে শান্তিনিকেতনে আসার উৎসাহ আরো প্রবল রূপে দেখা যাবে বলেই মনে হচ্ছে।
শান্তিনিকেতনের কোর হেরিটেজ এরিয়ার প্রস্তুতি
গত শুক্রবার সাংবাদিকদের কাছে উপাচার্যের এই কথা জানানোর পর থেকেই পর্যটক দের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে শান্তিনিকেতন এর কোর হেরিটেজ এরিয়ার ।
ইউনেস্কোর গাইডলাইন মেনেই আশ্রম এলাকার মূল সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক চরিত্র বজায় রেখে তৈরি হচ্ছে মোরামের রাস্তা। স্বাভাবিক ভাবেই এই সব উদ্যোগ দেখে খুব খুশি রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষজনেরা।
ইউনেস্কো থেক “ ওয়ার্ল্ড লিভিং হেরিটেজ” এর স্বীকৃতি পাওয়ার পর পর্যটক দের ভিড় বাড়লেও করোনা কালে তৎকালীন উপাচার্য এর নিষেধাজ্ঞার কারণে মূল ক্যাম্পাস এর মধ্যে ঢোকার অনুমতি ছিল না সাধারণের জন্য। কিন্তু নতুন উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রবীন্দ্র চিন্তা ও স্থাপত্য দর্শনের সুযোগ সবার জন্য করে তুলতেই উপাচার্যের এই নতুন উদ্যোগ “হেরিটেজ ওয়াক” এর ভাবনা। এই ভাবনা কেই বাস্তবায়িত করে তুলতেই জোর কদমে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ক্যাম্পাস এর মধ্যে।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে যে, শান্তিনিকেতন এর মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা থেকে শুরু করে পথাভবন সংলগ্ন ক্যাহিতিবাড়ি হয়ে চাতিমতলা ফটক পর্যন্ত ইংরেজি “L” আকারের রাস্তা তৈরির কাজ হচ্ছে। এবং এটি রবীন্দ্রনাথের সময়লায়ের আদলে মোরামের উপর দুপাশে সিমেন্ট এর ছোট ছোট স্ল্যাব দিয়ে বাঁধানো হবে। তাছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রাস্তার দুপাশে লাগানো থাকবে বিভিন্ন ফুল গাছ। ক্যাম্পাস এর ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্যই মোরাম ব্যবহার করেই রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া যানজট এড়ানোর জন্যই সুবর্ণরেখা এর মোড় থেকে জগদীশ কানন মোড় হয়ে রবীন্দ্র ভবন পর্যন্ত নতুন হাঁটার পথ ও নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ইতি মধ্যেই।
সম্প্রতি শ্রীনিকেতন এর পল্লি সংগঠন বিভাগের রুরাল এক্সটেনশন সেন্টার এর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াকালীন তিনি বলেন যে, যেহেতু ক্যাম্পাস গত পাঁচ বছর ধরে পর্যটক দের জন্য বন্ধ ছিল তাই তাদের নিরাপত্তার দিকেই বিশেষ লক্ষ্য রাখা হবে এবং তার জন্য প্রস্তুতি ও সংস্কারের কাজ ও শুরু হয়েছে কিন্তু বর্ষার জন্য সেই কাজে দেরি হচ্ছে।

এই উদ্যোগে সবথেকে বেশি উপকৃত হবেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। শান্তিনিকেতন এর বাজারে হস্তশিল্পী, কাঠের কাজ করা কারিগর, কণ্ঠ সেলাই করা মহিলারা জানাচ্ছেন যে,”পর্যটক বাড়লে আমাদের বিক্রি বাড়বে। সবাই তো রবীন্দ্রভবন ঢুকে চলে জন, এখন যদি পুরো ক্যাম্পাস ঘুরতে পান , তাহলে দোকানেই আসবেন ও, কথা বলবেন। এটাই আমাদের চাহিদা।”
বিশ্বভারতীর এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত সুদূর ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী শিক্ষকেন্দ্রগুলির জন্যও একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদেরা। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবে রূপান্তরের সময় অনেক চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতে হবে কর্তৃপক্ষ দের। তাই নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা – এই সমস্ত বিষয়এই বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে বিশ্বভারতী প্রশাসনকে। এবং এই নয়া উদ্যোগ জোস সফল হয় তাহলে শান্তিনিকেতন হবে বাংলা তথা ভারতের একটি গর্বের কেন্দ্রবিন্দু।