শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এর “heritage walk” এর শুভারম্ভ

দুসপ্তাহের মধ্যে পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে বিশ্বভারতী

গত 23 জুলাই, বুধবার দিনই পর্যটকদের জন্য চলে আসে সুখবর বার্তা। আবারও শান্তিনিকেতন ঘুরে দেখতে পাবেন তারা। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় “ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ” তকমা পাওয়ার পর থেকে এই প্রথম র্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে বিশ্বভারতীর দরজা। গত বুধবার বিশ্বভারতীর আধিকারিকদের সঙ্গে করেই বিশ্বভারতী চত্বর ঘুরে দেখেন বর্তমান উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ। এবং কোন রুটে কিভাবে পর্যটকরা যাতায়াত করবেন টা বুধবার তিনি নিজে উপস্থিত থেকে আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দেখেন, তবে আপাতত সপ্তাহে মাত্র একটি দিন রবিবারই পর্যটকরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন। এবং এর জন্য ইতি মধ্যেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন যাতে হেরিটেজ ওয়াক শুরু হওয়ার পর কোনো ভাবেই বিদ্যালয় বা পর্যটক দের কোনো রকম অসুবিধার মুখোমুখি না হতে হয়। তবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তাই পর্যটকদের জন্য থাকছে একাধিক বিধিনিষেধ, সময়সীমা ও নিরাপত্তা। তাছাড়া টিকিট কেটে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রাঙ্গণ, ঐতিহ্যবাহী ভবন, ভাস্কর্য ও আরো অন্যান্য স্থানগুলি দেখার সুযোগ থাকছে।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য এই প্রসঙ্গে কি বলেছেন
উপাচার্য বলেছেন -” গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই স্থান যাতে পর্যটকেরা দেখতে পারেন, তার ব্যবস্থা আমরা করছি ৷ মাত্র চার মাসের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । পর্যটকদের যারা ঘুরিয়ে দেখাবেন, তার জন্য গাইডদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি । এছাড়া, বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় গাইড লিফলেট থাকবে, তাতে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলির বিবরণ দেওয়া থাকবে ৷ দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রতি রবিবার আমরা এই পরিষেবা শুরু করব ।”
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রমণের অতীত থেকে বর্তমান
পূর্বে বিশ্বভারতীর দ্বার সর্বদাই খোলা থাকত পর্যটকদের জন্য। সেই সময় এত নিয়ম এর বেড়াজাল ও ছিল না তাদের জন্য। তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাঠাভবন এর পঠন পাঠন শেষ হওয়ার পর ঘুরে দেখতেন আশ্রম প্রাঙ্গণ। 2020 সালে covid এর পর থেকে এই ক্যাম্পাস পর্যটকদের জন্য বন্ধ করা হয় এবং তারপর থেকে আরও তাদের জন্য খোলেনি এই ক্যাম্পাস।১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে, ইউনেস্কো বিশ্বকবির “প্রানের আরাম” শান্তিনিকেতনকে “বিশ্ব ঐতিহ্য” খেতাব দেয়। এটি বিশ্বের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যা এখনও খোলা আছে। এর ফলে শান্তিনিকেতন জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী ভবন, ভাস্কর্য এবং অন্যান্য সম্পদ রক্ষা করা বিশ্ব ঐতিহ্য কর্তৃপক্ষের জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এই কারণেই তারা ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও পর্যটকদের জন্য ক্যাম্পাসটি খুলতে পারেনি। তবে, ইউনেস্কো তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলি দেখতে যাতে পর্যটকরা পারেন তা নিশ্চিত করতেও বলেছে। এই প্রথমবারের মতো “বিশ্ব ঐতিহ্য” শান্তিনিকেতন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।

পর্যটকরা কবে এবং কিভাবে ঘুরে দেখতে পারবেন
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শান্তিনিকেতন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আপাতত, পর্যটকরা সপ্তাহে কেবল একদিন শান্তিনিকেতনে যেতে পারবেন। প্রতি রবিবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পরবর্তী সময়ে, পাঠভবনের ছুটির দুদিন বুধবার এবং শনিবার স্কুলের পরে, কর্তৃপক্ষ এই পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
শান্তিনিকেতন, পর্যটকদের ঘুরে দেখার সময় পুরো বিষয় টি নিয়ন্ত্রিত হবে রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালার অফিস থেকে। এইখান থেকেই ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার টিকিট ও সংগ্রহ করতে পারবেন পর্যটকরা। পায়ে হেঁটেই তাদের ক্যাম্পাস চত্বর ঘুরে দেখতে হবে এবং একটি 25 জনের ব্যাচ করে ঘুরে দেখানো হবে। সারাদিনে 4 বার একটি করে ব্যাচ ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন। ব্যাচ এর সময়সীমা – সকাল 10:30 টা, বেলা 11:30 টা, দুপুর 2: 30 টা এবং দুপুর 3:30 তে। প্রতীক ব্যাচ জন্য দুঘন্টা সময় ধার্য করা হয়েছে।
টিকিট মূল্য এবং পরিষেবা ব্যবস্থা
পর্যটক দের মাথাপিছু টিকিট মূল্য 100 টাকা এবং তারা যদি গাইড নিয়ে যান তাহলে মাথাপিছু টিকিট মূল্য হবে 250 টাকা। এখন আপাতত রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালা থেকেই পর্যটক রা টিকিট কিনবেন কিন্তু পরবর্তী তে অনলাইন পরিষেবাও দ্রুত চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শান্তিনিকেতন ঘুরে দেখতে গেলে টিকিট মূল্য মাথাপিছু 300 টাকা ধার্য করা হয়েছে। কোনো পড়ুয়াদের ব্যাচ ঘুরতে এলে মাথাপিছু টিকিট মূল্য 50 টাকা কিন্তু কোনো পরোয়া একা ঘুরতে চাইলে সেক্ষেত্রে টিকিট মূল্য হবে 150 টাকা। তবে বিদেশী পর্যটকদের জন্য টিকিট মূল্য মাথাপিছু 1000 টাকা করে। তাছাড়া টিকিট এর সঙ্গে বিনামূল্যে মিলবে দুপাতার লিফলেট। তাতে সংক্ষিপ্তাকারে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া থাকবে এবং হিন্দি, বাংলা ও ইংলিশ 3 ভাষাতেই এই লিফলেট পাওয়া যাবে। প্রত্যেক ব্যাচ এর সঙ্গে বিশ্বভারতীর নিজস্ব 2 জন গাইড দেওয়া হবে, এটি মধ্যে 4 জন কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
পর্যটকরা কোন পথে কী কী দেখতে পাবেন
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে যে, শান্তিনিকেতন এর মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা থেকে শুরু করে পাঠভবন সংলগ্ন ক্কালো বাড়ি হয়ে চাতিমতলা ফটক পর্যন্ত ইংরেজি “L” আকারের রাস্তা তৈরির কাজ হচ্ছে। এবং এটি রবীন্দ্রনাথের সময়লায়ের আদলে মোরামের উপর দুপাশে সিমেন্ট এর ছোট ছোট স্ল্যাব দিয়ে বাঁধানো হবে। তাছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রাস্তার দুপাশে লাগানো থাকবে বিভিন্ন ফুল গাছ। ক্যাম্পাস এর ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্যই মোরাম ব্যবহার করেই রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া যানজট এড়ানোর জন্যই সুবর্ণরেখা এর মোড় থেকে জগদীশ কানন মোড় হয়ে রবীন্দ্র ভবন পর্যন্ত নতুন হাঁটার পথ ও নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ইতি মধ্যেই।
তবে এখনই কলাভবন ও সংগীতভবন ঘুরে dkahar সুযোগ থাকছেনা। পরবর্তী সময়ে কলাভবন ও শ্রীনিকেতনও যাতে পর্যটকরা ঘুরে দেখতে পা তার জন্যও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাতে বাড়িতে বসেই ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়,তার জন্য একটি সাইট তৈরি করা হচ্ছে।
শান্তিনিকেতন আশ্রম ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
1883 সালের মার্চ মাসে, তৎকালীন রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, চাতিমতলাসহ 20 বিঘা জমি বার্ষিক 5 টাকা কান্নায় মৌরসিপাট্টা পেয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল একটি ব্রহ্ম আশ্রম প্রতিষ্ঠা করার কিন্তু জমি পাওয়ার আগে থেকেই এখানে একটি গৃহ ছিল যা বর্তমানে শান্তিনিকেতন গৃহ নামে পরিচিত। এবং এই স্থানেই মহর্ষি শান্তিনিকেতন আশ্রম।প্রতিষ্ঠা করেন।
শান্তিনিকেতন আশ্রম।প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে শুরু হয় ব্রহ্ম উপাসনা। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পরিকাঠামোর সঙ্গে গুরুদেব এর মতাদর্শ গত পার্থ প্রথম থেকেই ছিল। তাই এই আশ্রম এই পঠন পাঠণ শুরুর চিন্তাভাবনা করেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং গুরুদেব। সেই কতই 1901 সাল থেকে শুরু হয় বিদ্যালয় অধ্যয়ন, প্রথমে নাম ছিল “ব্রহ্মচর্যাশ্রম”। পরে কবিগুরু নাম দেন বিশ্বভারতী।1918 সাল থেকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বভারতীর আত্মপ্রকাশ ঘটে।তবে 1921 সাল থেকে বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম হয়। কবিগুরু দেশ বিদেশ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বদের আহ্বান করে এনেছিলেন। এরপর গুরুদেব এর হাত ধরেই বিশ্বভারতীর পথচলা শুরু এবং যা এখনও সুন্দর ভাবে চলে আসছে