শান্তিনিকেতনে এবারও হচ্ছে না বসন্তোৎসব, মনখারাপ বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের , SANTINIKETA BASANTA UTSAV 2025

শান্তিনিকেতনে এবারও হচ্ছে না বসন্তোৎসব, মনখারাপ বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের - SANTINIKETA BASANTA UTSAV 2025

শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের অতীত ও বর্তমান

2019 সালে শেষবার শান্তিনিকেতনের আশ্রম মাঠে বসন্তোৎসব হয়েছিল। একসময় শান্তিনিকেতনের আশ্রম মাঠে মানুষের হৈচৈ ছিল বড্ড বেশি , কিন্তু বেশ কয়েক বছর এই বিশ্ববিদ্যালয় বসন্ত উৎসবে প্রবেশের অনুমতি মেলেনি সাধারণ মানুষের। প্রসঙ্গত ২০২০ সালের পর থেকে নানা কারণে বসন্ত উৎসবে সাধারণ মানুষের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেওয়া হয়।
এবছর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় 2025 সালের ১১ই মার্চ পালিত হবে বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসব। এবং প্রতিবছরের মতোই সাধারণ মানুষের উপস্থিতি অনুমতি কর্তৃপক্ষ দেবেন না কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রবেশাধিকার থাকবে। শুক্রবার লঘু বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একপ্রকার ঘরোয়া ভাবে এই উৎসব পালন করা হবে যেটা রবীন্দ্রনাথ কখনোই চাননি। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন একই সুরে সমগ্র নিকেতন আনন্দে মেতে উঠবে। কিন্তু আজ বিভিন্নভাবেই হোক বহিরাগত মানুষের কারণেই এই সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের। বিশ্বনিকেতনে ছড়িয়ে পড়া এই উৎসব আজ সীমিত হয়ে পড়েছে আমাদেরই জন্য।

বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্ত ও সাধারণ মানুষের হতাশা

গত বছরও, ছাত্র, শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া পর্যায়ে বসন্ত বন্দনা আয়োজন করা হয়েছিল। বিশ্বভারতীর উপাচার্য, সকল ভবনের অধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, কর্মচারী এবং কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গত বছর, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দোল উৎসব পালিত হয়েছিল। যদিও সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা ছিল, রঙ বা আবির নিয়ে খেলা নিষিদ্ধ ছিল। এবারও কোনও ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

রঙের উৎসব বসন্ত উৎসব (হোলি ২০২৫) দ্রুত আসছে। এই উৎসবে অনেকেই শান্তিনিকেতনে আসেন। কিন্তু যারা এই ধরণের পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য মন খারাপের খবর আগেই দিয়েছি । কারণ এবারও বীরভূমে অবস্থিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৫ সালের বসন্ত উৎসব প্রকাশ্যে উদযাপনের অনুমতি দিচ্ছে না।

২০২৫ সালের বসন্ত বন্দনার আয়োজন ও সীমাবদ্ধতা

টানা ছয় বছর ধরে বিশ্বভারতীতে ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসব উদযাপন বন্ধ রয়েছে। বিশ্বভারতী শেষবার বসন্ত উৎসবের সাধারণ মানুষের জন্য দরজা খুলে দিয়েছিল ২০১৯ সালে। তবে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে উৎসবটি বাতিল করা হয়েছিল। তারপর, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে বিশ্বভারতীর নিজস্ব কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে বসন্ত মহোৎসব আয়োজন করা হয়নি। গত বছরও, উৎসবটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল না এবং শুধুমাত্র ‘বসন্ত বন্দনা’ আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে শুধুমাত্র বিশ্বভারতীর ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই বছরও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা একই স্টাইলে বসন্ত মহোৎসব আয়োজন করবেন।
বিশ্বভারতী জানিয়েছে যে জনসমাগম এবং নিরাপত্তার বিষয়গুলো মাথায় রেখে, এ বছরও বসন্ত মহোৎসব শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ‘বসন্ত বন্দনা’ ছাত্র, শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের সাথে ঘরোয়া পরিবেশে উদযাপিত হবে। ক্যাম্পাসের ভেতরে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হবে। তবে গত বছরের মতো এবারও আবির ও রঙ দিয়ে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসব কেবল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকরা হতাশ। অনেকেই আশা করেছিলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অবসরের পর পৌষ মেলা যেমন ফিরে এসেছিল, তেমনি বসন্ত উৎসবও তার পুরনো রূপে ফিরে আসবে। কিন্তু তাদের আশা ভেঙে গেল যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বছরও উৎসব না করার সিদ্ধান্ত নিল।

রবীন্দ্রনাথের ভাবনা বনাম বর্তমান বাস্তবতা

পরিশেষে বলা যায় এই বসন্তের দুঃখ নিয়ে এবছর বসন্ত উৎসব কাটবে শান্তিনিকেতন এর বাসিন্দাদের। যে বসন্ত একদিন ছিল শান্তিনিকেতনের বন্ধনে স্পন্দনে , সেই বন্ধন যেন ধীরে ধীরে আলগা হয়ে পড়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথ চিরকাল চেয়েছিলেন বসন্ত যেমন শান্তিনিকেতনের স্কন্দে স্কন্দে প্রেমের স্বরূপকে ফুটিয়ে তোলে ঠিক তেমনি প্রত্যেকটা মানুষের মন যেন বসন্ত হয়ে ওঠে। এমনটা যেন বসন্ত নিজেও চাই।

You may also like

Comments are closed.