
বিশ্বভারতীর আশ্রম প্রাঙ্গণ পুনরায় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত
শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্রম প্রাঙ্গণ, যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত, দীর্ঘ চার বছর পর পুনরায় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বভারতীর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক প্রবীর কুমার ঘোষ এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আশ্রম প্রাঙ্গণে পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকার পর অবশেষে এই ঐতিহাসিক স্থান আবারও সকলের জন্য উন্মুক্ত হলো।
করোনা মহামারির প্রভাব ও নিষেধাজ্ঞা
২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্রম প্রাঙ্গণে পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যার ফলে কবিগুরুর আশ্রম প্রাঙ্গণ, গৌড় প্রাঙ্গণ, পাঠভবন, ছাতিমতলা, আম্রপুঞ্জ এবং শান্তিনিকেতন গৃহের মতো দর্শনীয় স্থানগুলি পর্যটকদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও প্রযোজ্য ছিল। ফলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানগুলি দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন বহু মানুষ।

নতুন উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ ও আশ্রম প্রাঙ্গণ উন্মুক্তকরণ
বুধবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক প্রবীর কুমার ঘোষ। দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি আশ্রম প্রাঙ্গণ পুনরায় উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, বিশ্বভারতীকে শীর্ষস্থানে পৌঁছে দেওয়া এবং শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে কাজ করা তাঁর মূল লক্ষ্য। শুক্রবার বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করার বিষয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষ পর্যটকদের জন্য আশ্রম প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।
পর্যটকদের জন্য নতুন নির্দেশিকা
যদিও আশ্রম প্রাঙ্গণ পুনরায় উন্মুক্ত করা হয়েছে, তবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে বিশেষ নজর দিচ্ছে। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, পর্যটক এবং বহিরাগতদের আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, তবে তা কিছু শর্তসাপেক্ষে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আশ্রম প্রাঙ্গণের ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পর্যটকদের জন্য আনন্দের খবর
দীর্ঘ চার বছর পর শান্তিনিকেতনের আশ্রম প্রাঙ্গণ পুনরায় উন্মুক্ত হওয়ায় পর্যটক এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। শান্তিনিকেতন শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-চেতনা এবং সৃজনশীলতার প্রতীক। এখানকার গৌড় প্রাঙ্গণ, পাঠভবন, ছাতিমতলা, আম্রপুঞ্জ এবং শান্তিনিকেতন গৃহের মতো স্থানগুলি পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। করোনা মহামারির আগে এই স্থানগুলি দেখার জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক শান্তিনিকেতনে আসতেন। এবার আবারও সেই সুযোগ ফিরে পাওয়ায় পর্যটকরা উচ্ছ্বসিত।

উপাচার্যের প্রতিশ্রুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিশ্বভারতীর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক প্রবীর কুমার ঘোষ তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আশ্রম প্রাঙ্গণ এবং বিশ্বভারতীকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এই লক্ষ্যে কাজ করার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, শান্তিনিকেতন শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ এবং বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই ঐতিহ্য রক্ষা করাই তাঁর মূল লক্ষ্য।
শান্তিনিকেতনের আশ্রম প্রাঙ্গণ পুনরায় উন্মুক্ত হওয়ায় পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ চার বছর পর আবারও এই ঐতিহাসিক স্থানগুলি দেখার সুযোগ পাওয়ায় সকলেই খুশি। নতুন উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রাঙ্গণ নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে বলে আশা করা যায়। পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এই স্থানটির ঐতিহ্য এবং পরিবেশ রক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্যই নয়, বাঙালি সংস্কৃতি এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শকে সম্মান জানানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আশা করা যায়, শান্তিনিকেতন আবারও তার পুরনো গৌরব ফিরে পাবে এবং বিশ্বের দরবারে একটি অনন্য স্থান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে