Santiniketan Traditional Poush Mela 2024: Date and Schedule

পৌষ মেলা ২০২৪: উৎসব, তারিখ এবং সময়সূচী

শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। প্রতি বছর এই মেলায় হাজার হাজার মানুষ যোগ দিয়ে বাংলার লোকসংস্কৃতি, গান এবং হস্তশিল্পের আস্বাদ গ্রহণ করেন। আমরা ২০২৪ সালের পৌষ মেলার তারিখ, সময়সূচী ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সূচি নিচে দেখে নেব।

পৌষমেলা শান্তিনিকেতনের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসব।

 ২০২৪ সালে এটি শুরু হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর এবং চলবে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে এবারের পৌষমেলায় আন্তর্জাতিকতার অভাব লক্ষ্য করা যাবে। বিশেষত, ওপার বাংলা তথা বাংলাদেশের কোনও স্টল এবছর মেলায় অংশগ্রহণ করছে না। একইসঙ্গে নেপাল এবং ভূটানের স্টলও থাকবে না। তবুও, মেলার আয়োজন নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার কোনও ঘাটতি নেই।

২০২৪ সালের পৌষ মেলার তারিখ

২০২৪ সালের পৌষ মেলা শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর এবং শেষ হবে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই পাঁচ দিনের মেলা প্রতিদিন সকালে সঙ্গীত এবং উপাসনার মাধ্যমে শুরু হয় এবং দিনব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ভরপুর থাকে।

পৌষমেলার প্রস্তুতি: ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ

২০১৯ সালের পর প্রথমবার শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যৌথ উদ্যোগে পৌষমেলার আয়োজন করছে। শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার জানিয়েছেন, “বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটানের স্টল না থাকায় মেলায় একটা খামতি থাকছে। তবে আগামী বছর এই অভাব পূরণ হবে বলে আমাদের আশা।

বিশ্বভারতীর পৌষমেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ভ্রমর ভাণ্ডারী বলেন, “বিদেশি স্টল থাকলে মেলার আকর্ষণ আরও বাড়ত। কিন্তু এবছর তা সম্ভব হয়নি। তবে বিশ্বকবির অনুপ্রেরণায় দুই বাংলার মেলবন্ধন অটুট থাকবে।”

ঐতিহ্যের পথ ধরে পৌষ উৎসব

পৌষমেলা শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে জড়িত। ১৮৪৩ সালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন এই পৌষ মাসেই। সেই দিনটিকে স্মরণ করেই পৌষ উৎসবের সূচনা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী শান্তিনিকেতন ভ্রমণ করেন।

২০১৯ সালে শেষবার ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এরপর কোভিড পরিস্থিতি এবং প্রশাসনিক সমস্যার কারণে মেলা বন্ধ ছিল। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও তা ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার রূপ নেয়নি।

২০২৪ সালের পৌষমেলার সময়সূচি

এবারের মেলা পূর্বপল্লীর মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। পৌষ উৎসব শুরু হবে ২৩ ডিসেম্বর ভোরবেলা বৈতালিক গানের মাধ্যমে। প্রতিদিনই থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাউল গান, লোকগান, এবং মেলাপ্রাঙ্গণে দেশীয় হস্তশিল্পের প্রদর্শনী।

দর্শনার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য

  • তারিখ: ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • স্থান: শান্তিনিকেতন পূর্বপল্লী মেলা প্রাঙ্গণ
  • বিশেষ আকর্ষণ: বাউল গান, হস্তশিল্পের স্টল, এবং ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান।
৬ পৌষ 1431। 22 ডিসেম্বর 2024। রবিবার
সময় স্থান কার্যক্রম
রাত্রি ৯:০০ গৌরপ্রাঙ্গন বৈতালিক
রাত্রি ৯:৩০ শান্তিনিকেতন গৃহ সানাই
৭ পৌষ 1431। 23 ডিসেম্বর 2024। সোমবার
সময় স্থান কার্যক্রম
প্রাতঃকাল ৫:৩০ গৌরপ্রাঙ্গণ বৈতালিক
প্রাতঃকাল ৬:০০ শান্তিনিকেতন গৃহ উপাসনা
প্রাতঃকাল ৭:৩০ ছাতিমতলা বাউলগান
মধ্যাহ্ন ১২:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ মনসামঙ্গল
অপরাহ্ন ৩:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ কীর্তনগান
সায়ংকাল ৬:০০ ছাতিমতলা আলোকসজ্জা
রাত্রি ৯:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ কাঠিনৃত্য
৮ পৌষ 1431। 24 ডিসেম্বর 2024। মঙ্গলবার
সময় স্থান কার্যক্রম
প্রাতঃকাল ৬:০০ শান্তিনিকেতন গৃহ সানাই
প্রাতঃকাল ৮:০০ আম্রকুঞ্জ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
মধ্যাহ্ন ১২:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ সত্যপীরের পাঁচালী
অপরাহ্ন ৩:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ বাউলগান
রাত্রি ৯:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ মুখোশনৃত্য
৯ পৌষ 1431। 25 ডিসেম্বর 2024। বুধবার
সময় স্থান কার্যক্রম
প্রাতঃকাল ৬:০০ শান্তিনিকেতন গৃহ সানাই
প্রাতঃকাল ৮:০০ আম্রকুঞ্জ পরলোকগত আশ্রমবন্ধুদের স্মৃতিবাসর
মধ্যাহ্ন ১২:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ রামায়ণ গান
অপরাহ্ন ৩:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ বাউল ও ফকিরদের যৌথানুষ্ঠান
সায়ংকাল ৫:৩০ উপাসনা গৃহ খ্রীষ্টোৎসব
রাত্রি ৯:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান
১০ পৌষ 1431। 26 ডিসেম্বর 2024। বৃহস্পতিবার
সময় স্থান কার্যক্রম
প্রাতঃকাল ৬:০০ শান্তিনিকেতন গৃহ সানাই
প্রাতঃকাল ৯:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ ফকিরদের গান
প্রাতঃকাল ১০:০০ মেলাপ্রাঙ্গণ বাউলগান
প্রাতঃকাল ১১:৩০ মেলাপ্রাঙ্গণ মনসামঙ্গল
মধ্যাহ্ন ১২:৩০ মেলাপ্রাঙ্গণ কবিগান
অপরাহ্ন ২:৩০ মেলাপ্রাঙ্গণ মহিলা ঢাকীর ঢাক বাদন
সায়ংকাল ৪:৩০ মেলাপ্রাঙ্গণ লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান
সায়ংকাল ৫:১৫ মেলাপ্রাঙ্গণ সংশোধনাগার আবাসিকদের অনুষ্ঠান
সায়ংকাল ৬:৩০ মেলাপ্রাঙ্গণ যাত্রাভিনয়
রাত্রি ৭:৩০ মেলাপ্রাঙ্গণ যাত্রাভিনয়

শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার প্রভাব

শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা শুধুমাত্র একটি মেলা নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং রবি ঠাকুরের আদর্শের মেলবন্ধন। মেলা প্রাঙ্গণে দেশীয় হস্তশিল্প, খাদ্যপণ্যের স্টল, এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।

এই মেলা শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের নয়, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের কাছেও বিশেষ আকর্ষণ। ফলে এটি শান্তিনিকেতনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

মেলার বিশেষত্ব

পৌষ মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো বাংলার লোকগান, বাউল ও ফকিরদের পরিবেশনা। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় হস্তশিল্প প্রদর্শনী এবং বিক্রয়। যারা বাংলার মাটি এবং সংস্কৃতিকে কাছ থেকে দেখতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।

বিশেষ করে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ এই মেলাকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। মেলার প্রতিটি দিনই আলাদা আলাদা কার্যক্রমে ভরপুর।

কিভাবে পৌষ মেলায় পৌঁছাবেন

শান্তিনিকেতনে পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয় বোলপুর শহরে। কলকাতা থেকে ট্রেনে বোলপুর পৌঁছানো সহজ এবং তারপর সেখান থেকে টোটোতে মেলা প্রাঙ্গণে যাওয়া যায়। যারা গাড়ি ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্যও সড়কপথ রয়েছে।

শেষ কথা

পৌষমেলা ২০২৪ শুধু শান্তিনিকেতনের নয়, পুরো বাংলার গর্ব। আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ না থাকলেও, এর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মহিমা অক্ষুণ্ণ থাকবে। পৌষমেলার তারিখ এবং সময়সূচি জানার জন্য এই ব্লগটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। শান্তিনিকেতন আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এক অনন্য অভিজ্ঞতার জন্য।

#পৌষমেলা #শান্তিনিকেতন #বাংলারঐতিহ্য #বাংলারসংস্কৃতি #PoushMela2024

You may also like

Comments are closed.